অতিরিক্ত ঘাম কি?/ What is Excessive Sweating or Hyperhidrosis?
ঘাম মানুষের বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য এবং শরীরের কুল্যান্ট (একটি তরল বা গ্যাস যা কিছু থেকে তাপ অপসারণ করতে ব্যবহৃত হয়) হিসাবে কাজ করে, এটি অতিরিক্ত গরম হওয়া থেকে শরীরকে রক্ষা করে। আমাদের সারা শরীরে দুই থেকে চার মিলিয়ন ঘাম গ্রন্থি ছড়িয়ে আছে। তাদের বেশিরভাগই “একক্রাইন (eccrine)” ঘাম গ্রন্থি, যা পায়ের তলায়, তালুতে, কপালে, গালে এবং বগলে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়।
একক্রাইন গ্রন্থিগুলি একটি গন্ধহীন, পরিষ্কার তরল নিঃসরণ করে, যা বাষ্পীভবনের মাধ্যমে তাপ হ্রাসের প্রক্রিয়াকে বৃদ্ধি করে, শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে। অতিরিক্ত ঘাম (Excessive Sweating) সমস্যাকে হাইপারহাইড্রোসিস (Hyperhidrosis) বলে। সাধারণত, হাইপারহাইড্রোসিস এর জন্য যে ধরনের ঘাম হয়, সেটি একক্রাইন ঘাম নামে পরিচিত। অন্য ধরনের ঘাম গ্রন্থিকে “অ্যাপোক্রাইন (apocrine)” গ্রন্থি বলা হয়। অ্যাপোক্রাইন গ্রন্থিগুলি বগল এবং যৌনাঙ্গে পাওয়া যায়। এসব গ্রন্থি একটি ঘন তরল উত্পাদন করে। যখন এই তরলটি ত্বকের পৃষ্ঠে ব্যাকটেরিয়ার সংস্পর্শে আসে, তখন এটি একটি বৈশিষ্ট্যযুক্ত শক্তিশালী “শরীরের গন্ধ” তৈরি করে একক্রাইন এবং অ্যাপোক্রাইন ঘাম গ্রন্থি উভয়ই স্নায়ু দ্বারা সক্রিয় হয়। এই স্নায়ুগুলি বিভিন্ন ধরনের উদ্দীপনায় সাড়া দেয়।
যাদের অত্যধিক ঘাম হয় বা হাইপারহাইড্রোসিস আছে, তাদের ঘাম গ্রন্থি (বিশেষত একক্রাইন গ্রন্থি) উদ্দীপনার প্রতি অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখায় এবং সাধারণত অতিরিক্ত সক্রিয় থাকে, প্রয়োজনের তুলনায় বেশি ঘাম উৎপন্ন করে। এটা প্রায়ই বলা হয়ে থাকে যে, হাইপারহাইড্রোসিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ঘাম গ্রন্থি, যা এক ধরনের “অন” অবস্থানে আটকে থাকে।
ভুক্তভোগীদের সমস্যার ধরণ এবং সেই মোতাবেক চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ধারণ করার জন্য ডাক্তাররা অতিরিক্ত ঘাম সমস্যাকে সচরাচর দুটি ভাগে বিভক্ত করে। একটি হলো প্রাইমারি ফোকাল হাইপারহাইড্রোসিস (Primary Focal Hyperhidrosis) এবং অন্যটি সেকেন্ডারি জেনারেলাইজড হাইপারহাইড্রোসিস (Secondary Generalized Hyperhidrosis).
প্রাইমারি ফোকাল হাইপারহাইড্রোসিস (Primary Focal Hyperhidrosis)
“দুটি ধরনের মধ্যে পার্থক্য বোঝা” হাইপারহাইড্রোসিস এর ধরণ নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপগুলির মধ্যে একটি। প্রাইমারি ফোকাল হাইপারহাইড্রোসিস বলতে অত্যধিক ঘাম হওয়াকে বোঝায়, যা অন্য কোনো চিকিৎসার কারণে হয় না বা এটি সেবনকৃত কোন ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও নয়। এই ধরনের ঘাম শরীরের খুব নির্দিষ্ট এলাকায় ঘটে এবং এটি তুলনামূলকভাবে “প্রতিসম”, যার অর্থ শরীরের বাম এবং ডান উভয় দিক একইভাবে আক্রান্ত হয়। সবচেয়ে সাধারণ ফোকাল এলাকাগুলি হল দুই হাতে ঘাম, দুই পায়ে ঘাম, ঘর্মাক্ত আন্ডারআর্ম এবং ঘর্মাক্ত মুখ বা মাথা।
প্রাইমারি ফোকাল হাইপারহাইড্রোসিস প্রায়শই শৈশব বা কৈশোরে শুরু হয়, বিশেষ করে হাত ও পায়ের হাইপারহাইড্রোসিস (Excessive Sweating of Hands and Feet)। মজার ব্যাপার হল, প্রাথমিক ফোকাল হাইপারহাইড্রোসিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সপ্তাহে অন্তত একবার অত্যধিক ঘাম হওয়ার ঘটনা ঘটে থাকে, তবে তারা সাধারণত ঘুমানোর সময় অতিরিক্ত ঘাম অনুভব করে না। অনেক ক্ষেত্রে এটিও দেখা গেছে যে, প্রাইমারি ফোকাল হাইপারহাইড্রোসিস এ আক্রান্ত রোগী উত্তরাধিকারসূত্রে তা প্রাপ্ত এবং একই পরিবারের অনেক সদস্য এই অবস্থায় ভুগতে পারে। বিভিন্ন কারণে এটি হতে পারে, যার কারণ পুরোপুরি জানা নেই বিজ্ঞানীদের। তাই সমস্যাটির বৈজ্ঞানিক নাম Idiopathic Hyperhidrosis (ইডিওপ্যাথিক হাইপারহাইড্রোসিস)।
সেকেন্ডারি জেনারেলাইজড হাইপারহাইড্রোসিস (Secondary Generalized Hyperhidrosis)
হাইপারহাইড্রোসিসের অন্য প্রধান প্রকারকে সেকেন্ডারি জেনারেলাইজড হাইপারহাইড্রোসিস বলা হয়। এই ধরনের অত্যধিক ঘাম অন্য চিকিৎসা এর কারণে হয় বা সেবনকৃত ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। সেজন্য একে সেকেন্ডারি বলা হয়। প্রাইমারি ফোকাল হাইপারহাইড্রোসিসের চেয়ে সেকেন্ডারি হাইপারহাইড্রোসিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের শরীরের বড় বা অন্যান্য অংশে ঘাম হয়। দুই ধরনের হাইপারহাইড্রোসিসের মধ্যে আরেকটি মূল পার্থক্য হল যে, সেকেন্ডারি জেনারেলাইজড হাইপারহাইড্রোসিসে আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রায়ই ঘুমানোর সময় ঘামের লক্ষণ অনুভব করতে পারেন। সেকেন্ডারি হাইপারহাইড্রোসিসের ক্ষেত্রে, অত্যধিক ঘাম (Excessive Sweating) সাধারণত প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় শুরু হয়, যেখানে প্রাথমিক হাইপারহাইড্রোসিস শৈশব বা কৈশোরে শুরু হয়।
সেকেন্ডারি জেনারেলাইজড হাইপারহাইড্রোসিসের সম্ভাব্য চিকিৎসা পরিকল্পনা তৈরি করার আগে, নিশ্চিত হতে হয় সমস্যার জন্য কোন ধরনের মেডিকেল কন্ডিশন জনিত বা সমস্যার মূলে কোন সেবনকৃত ওষুধ কিনা।
প্রাসঙ্গিক প্রয়োজনীয় তথ্যসমূহ-
আয়ন্টোফোরেসিস (Iontophoresis): হাত-পায়ের অতিরিক্ত ঘাম সমস্যার কার্যকর সমাধান
১৯৪০ সাল থেকে হাত এবং পায়ের অতিরিক্ত ঘামের চিকিৎসায় আয়ন্টোফোরেসিস পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
আরো বিস্তারিত….
হোম আয়ন্টোফোরেসিস (Iontophoresis) থেরাপি সেবা
বাসায় বসে আয়ন্টোফোরেসিস (Iontophoresis) থেরাপি সেবা গ্রহণ করে, মাত্র ১৫ দিনের মধ্যে হাত ও পায়ের অতিরিক্ত ঘামকে স্বাভাবিক করুন।
আরো বিস্তারিত….
সোয়েট-গার্ড: আধুনিক আয়ন্টোফোরেসিস (Iontophoresis) ডিভাইস
বাসায় বসে আয়ন্টোফোরেসিস ডিভাইস Sweat- Guard ব্যবহার করে ১৫ দিনের মধ্যে হাত ও পায়ের অতিরিক্ত ঘামের মত বিব্রতকর এবং অস্বস্তিকর শারীরিক সমস্যা প্রশমিত করুন।